যেভাবে প্রবাসে পূর্ণ হলো এম ফয়সল আহমদ এর একটি বছর

বিজয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত ১১, ডিসেম্বর, ২০২২, রবিবার
যেভাবে প্রবাসে পূর্ণ হলো এম ফয়সল আহমদ এর একটি বছর

১. দেখতে দেখতে চোখের পলকেই প্রবাসে এক বছর অতিবাহিত হয়ে গেলো। ভাবতেই অবাক লাগে, যেন এইতো ক’দিন আগে এসেছিলাম সৌদী আরবে! কিভাবে শেষ হয়ে গেলো জীবনের মূল্যবান সময়টুকু। একাকী নিজেকে প্রশ্ন করলে থমকে যাই। গত বছরের (২০২১) ১২-ই ডিসেম্বর শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে সৌদি আরবে প্রবেশ করি। আজ এবছরের (২০২২) ১২ ই ডিসেম্বর। অর্থাৎ দূর প্রবাসে এক বছর পূর্ণ হয়ে গেলো। প্রাথমিকভাবে সৌদিতে আসার পর মাসখানেক এক সাপ্লাই কোম্পানির আন্ডারে রাজধানী রিয়াদে এক বাসায় থাকার সময়ে অন্য কোম্পানিতে ট্রান্সফার হই। মূলত যার মাধ্যমে যে কাঙ্ক্ষিত কাজের উদ্দেশ্যে রিয়াদের বাসায় প্রহর গুনছিলাম, তার লেশমাত্রও ঠিকঠাক পাইনি। বরং উদ্বিগ্নতা ও বিষন্নতার কঠিন সময়ে দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছিলাম, কখন স্বস্তি ফিরে আসবে। ঋণের বোঝা ও দালালদের খপ্পরে পড়ে সিরিয়াস ঝুঁকিতে ছিলাম। পরবর্তীতে নিজ বুদ্ধিমত্তায় অন্য কোম্পানিতে ট্রান্সফার হয়ে এখন পর্যন্ত ইনকাম করছি ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।

২. সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, পুরো একটা বছর কাজ করে আসছি সৌদী আরবের জেদ্দাস্থ প্রেসিডেন্ট সালমান বিন আব্দুল আজিজ এর বাসভবনে। প্যালেসের সৌন্দর্য্যের কথা তো ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। প্রেসিডেন্ট প্যালেসে কাজের ওসিলায় সৌদী গভর্মেন্টের বড় বড় মুদীরদের সাথে চলাফেরা ওঠাবসার সুযোগ হচ্ছে নিয়মিত। তাদের সৌখিনতা আচার-আচরণ খুব কাছ থেকে দেখছি। হাসিখুশি ফান হৈচৈ তো বটেই, তাদের গর্জিয়াস দামী দামী গাড়ি ও বাহারী রকমের অঢেল খানাপিনার অপচয় দেখলে তো চোখ কপালে উঠে যাবে। দেখলে মনে হয় পৃথিবীতে তাঁরাই সুখী, নেই চিন্তা নেই ফিকির। যা চাচ্ছে তাই পাচ্ছে হাতের নাগালে।

৩.তাছাড়া আমাদের কোম্পানিতে বহু দেশের মানুষ কাজ করছে, যেমন ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, সুদান, মিসর ইয়েমেন সহ বিভিন্ন কালচারের মানুষ। তাদের সাথে আলাপচারিতায় বসলে মজার মজার মজার ব্যাপারগুলো উঠে আসে। বেশ ভালো সময় কাটছে ছেলেমানুষি চলাফেরায়। বিশেষকরে আমি নিজে ভাবতে পারিনি যে, সৌদীতে এসে কোনো সরকারি বাসভবনে সরকারি লোকদের সাথে কাজ করতে পারবো! আর তাদের চাকচিক্যময় সৌখিনতায় ঘেরা লাইফটাইম লাইফস্টাইল দেখতে পারবো। আর হ্যাঁ যেখানে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট প্যালেসের ভেতরে যাওয়া তো দূরের কথা, কখনো ধারেকাছেও যাওয়ার চিন্তা করিনি। কঠিন সিকিউরিটিতে ভয়ে থরথর করবে নিশ্চয়ই। সেখানে ভিন্ন একটি দেশের প্রেসিডেন্ট প্যালেসে বড়দের সাথে কাজ করা বড়ই ভাগ্যের ব্যাপার।

৪. সৌদী আরবে আসার পর সর্বশেষ যখন রিয়াদ থেকে জেদ্দায় আসি। তখন কিছুদিন পরই জেদ্দা থেকে মক্কাতুল মুকাররমা দেখার উদ্দ্যেশ্যে রওয়ানা হয়ে যাই। এবং আল্লাহর ঘর তওয়াফ করি প্রাণভরে উপভোগ করি বিভিন্ন দেশ থেকে আসা হাজিদের হজ্ব করার দৃশ্যবলী। এদিকে পরপর দুইবার উমরাহ আদায়ের পর তৃতীয় উমরাহ হজে হাজরে আসওয়াদে চুমু হাতিমে কা’বায় নামাজ পড়ার সুযোগ হলো আলহামদুলিল্লাহ। মক্কা থেকে কিছু দূরে মীনা, মুযদালিফা, আরাফাত ও জাবালে নুর পাহাড়, যেখানে হেরাগুহা রয়েছে পবিত্র কুরআনুল কারিম যেখানে নাযিল হয়েছে সেই একহাজার মিটার দৈর্ঘ্য পাহাড়ে উঠে পবিত্র স্থানটি দেখার তাওফিক হলো।
খুব হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছি, যে কারো পক্ষে সম্ভব নয় এ পাহাড়ে ওঠা। তার মাসখানেক পরই মদীনা শরীফে রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাওজা শরীফ জিয়ারত করার তাওফিক হলো। এবং জান্নাতুল বাকি সহ কুরআন হাদীসে বর্ণিত নানান দর্শনীয় স্থানগুলো দেখেছি। যা আমার জন্য অভূতপূর্ব অকল্পনীয় উদাহরণ হয়ে থাকবে। উপর্যুক্ত কথাগুলো লৌকিকতা প্রদর্শনের জন্য শেয়ার নয়, বরং নিরীহ লোকটাকে আল্লাহ তাআলা এতোকিছু দেখিয়েছেন তার স্ব দয়ায়।

৫. বর্তমানে কোম্পানির কাজে জেদ্দা থেকে মক্কায় অবস্থান করছি। মক্কা থাকার ফলে মক্কার আশপাশের বিভিন্ন এরিয়া ও রাস্তাগুলোর সাথে পরিচিত হচ্ছি। সময় হলে মসজিদুল হারামে ঘুরাফেরা করতে চলে যাই। মক্কা এরিয়ায় ফ্রী বাস সার্ভিস থাকায় আরো সহজে এদিকসেদিক ছুটাছুটি করছি। এমনকি ঘুম থেকে উঠেই প্রতিদিন পাহাড়ঘেরা মরুভূমি দেখছি আর ভালোলাগা উপলব্ধি করছি। পরিশেষে প্রিয় পাঠকের কাছে দোয়া চাই, যেন আল্লাহ তাআলা এ দূর প্রবাসে সুস্থতার সাথে সহীহ সালামাতে রাখেন। বাংলাদেশে ফিরে আসার তাওফিক দেন। আমীন।

এম. ফয়সাল আহমদ (সৌদি আরব)
১২-ই ডিসেম্বর ২০২২

শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন
  • 11
    Shares