ইতিমধ্যেই কয়েক দশকের সংঘাত এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখেছে আফ্রিকার দেশ সুদান। এমন অবস্থার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী সামরিক দলগুলোর সাম্প্রতিক যুদ্ধ দেশটির বিশাল জনসংখ্যাকে আরও বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। লাখ লাখ মানুস আরও বড় মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কায় রয়েছেন।
কয়েক সপ্তাহের উত্তেজনার পর গত ১৫ এপ্রিল রাজধানী খার্তুমে আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের সুদানি সশস্ত্র বাহিনী এবং হেমেদতি নামে পরিচিত মোহাম্মদ হামদান দাগালোর র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
শহরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাকা যাত্রীবাহী বিমানগুলোকে আগুনে পোড়ানো হয়েছে। মাথার ওপর উড়ছে যুদ্ধবিমান। বুলেটের আঘাতে ছিদ্র হয়ে গেছে অনেক ভবনের দেওয়াল। রাজধানীজুড়ে শোনা যাচ্ছে কামানের গর্জন।
খার্তুমের বাসিন্দা আবদুল্লাহ মুখতার বলেন, ‘হঠাৎ করে যুদ্ধের ফলে রাজধানীতে জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তার বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই।
তিনি বলেন, ‘রাজধানীর ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ দৈনিক মজুরি শ্রমিক। যদি তারা তাদের মজুরি হারায় তবে তাদের কোনও না কোনওভাবে জীবন বাঁচাতে হবে। আমরা যেমন শুনেছি এবং দেখেছি, প্রচুর লুটপাট হচ্ছে। আশেপাশের এলাকাগুলো সম্পূর্ণ অন্ধকারে রয়েছে।’
আবদুল্লাহ মুখতার বলেন, ‘সুপারমার্কেটগুলো জনশূন্য। লোকেরা একের পর এক দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছে। সত্যি বলতে কি, কিছু ব্যক্তিগত উদ্যোগ ছাড়া শহরের কোথাও কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি। এটি একটি যুদ্ধ অঞ্চল এবং এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক।’
তার কথায়, ‘আমি উভয় পক্ষ থেকে কোনো মানবিক সহায়তা দেখিনি। আমি কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থাও দেখিনি। বিমানবন্দরটি যখন প্রযুক্তিগতভাবে বিমান অবতরণের জন্য উপযুক্ত নয়, তখন তারা কীভাবে রাজধানীতে পৌঁছাবে?
লক্ষ লক্ষ সুদানী বেসামরিক নাগরিক এখন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর মাঝখানে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ রাজধানী ছেড়েছে। অনেকে এখনও সহিংসতা থেকে পালানোর চেষ্টা করছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা বৃহস্পতিবার বলেছে যে গত কয়েক দিনে ১০ থেকে ২০ হাজার মানুষ সুদানের পশ্চিম দারফুর অঞ্চল থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশ চাদে আশ্রয় চেয়েছে। এরই মধ্যে দারফুর থেকে তিন লাখ ৭০ হাজারের বেশি সুদানীকে আশ্রয় দিয়েছে চাদ।
কয়েক দশকের নিষেধাজ্ঞা, অর্থনৈতিক অবনতি, আন্তঃসাম্প্রদায়িক সহিংসতা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরম আবহাওয়ার ঘটনা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সুদানের মানবিক পরিস্থিতি আগে থেকেই অনিশ্চিত অবস্থায় ছিল।
সর্বশেষ লড়াইয়ের আগে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের অফিস ধারণা করেছিল যে, সুদানের ৪৫.৬ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে ১৫.৮ মিলিয়ন মানুষের ২০২৩ সালে মানবিক সহায়তার প্রয়োজন হবে। এটি ২০২১ সালের তুলনায় ১.৫ মিলিয়ন বেশি। এর মধ্যে, প্রায় ১১ মিলিয়ন মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।
ত্রাণ কর্মকর্তারা এখন আশঙ্কা করছেন পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আফ্রিকা, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের রিফিউজিস ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক ড্যানিয়েল সুলিভান বলেন, ‘বর্তমান সংঘাত গৃহযুদ্ধে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি নিয়ে আমি সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। এটি বেসামরিক মানুষের মৃত্যু বাড়াবে এবং লাখ লাখ মানুষের সাহায্যের পথ বন্ধ করে দেবে।’
তিনি বলেন, ‘শহুরে এলাকায় যুদ্ধ, গোলাবর্ষণ এবং বিমান হামলার ফলে অসংখ্য বেসামরিক লোক মারা গেছে। মানুষ খাদ্য, পানি এবং চিকিৎসা সেবা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সহায়তার প্রয়োজন এমন লাখ লাখ লোকের কাছ থেকে ত্রাণ প্রদানকারী গোষ্ঠীগুলোকেবিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।’