নবিজি কাঁদছেন!
নেকলেসটি হাতে নিতেই দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি!
-‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার চোখে জল? আপনি কাঁদছেন? কী হয়েছে’? জিজ্ঞেস করলেন কেউ একজন। নবিজি বললেন, ‘নেকলেসটি দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি। পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে গেছে। তোমরা কি জানো এই নেকলেসটি কার ছিল’?
সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকালেন। নবিজি বললেন, ‘এটি আমার খাদিজার নেকলেস। মেয়ের বিয়ের সময় সে তার নিজ হাতে মেয়ের গলায় পরিয়ে দিয়েছিল। খাদিজা মারা যাবার পর এই প্রথম তার স্পর্শ করা নেকলেসটি হাতে নিতেই খাদিজার কথা আমার মনে পড়ে গেল’!
যুদ্ধবন্দী আবুল আস মুক্তিপণ হিশেবে নেকলেসটি জমা দিয়েছেন। আবুল আস ছিলেন মক্কার প্রতিষ্টিত একজন ব্যবসায়ী। নবিজির বড় মেয়ের জামাই। নবিজি হিজরত করে মদিনায় চলে গেছেন। বড় মেয়ে জয়নাব স্বামীর সাথে_ মদিনায়। (আবুল আস পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন_ রাজিআল্লাহু আনহু।) আবুল আসের সাথে জয়নাবের বিয়েটা হয়েছিল আম্মি খাদিজার প্রস্তাবে।
একদিন খাদিজা বললেন, হুজুর! একটা কথা বলি?
নবিজি বললেন, বলো খাদিজা।
-আমি আমাদের জয়নবের বিয়ের কথা ভাবছি।
-ভাববারই কথা। মেয়ে বড় হয়েছে। বিয়ে দেওয়া দরকার।
-আমার ইচ্ছা জয়নবকে আমার ভাগ্নের কাছে বিয়ে দেব- অবশ্য আপনি যদি রাজি থাকেন।
– দেওয়া যায়।
-অবশ্য আপনার যদি অন্য ইচ্ছা থাকে, তাহলে সমস্যা নাই। আমি বলেছি বলেই যে আমার ভাগ্নের সাথে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে- এমন না। আপনার কী ইচ্ছা?
নবিজি বললেন, তোমার ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা, খাদিজা। তোমার ভাগ্নের সাথেই মেয়ের বিয়ে হবে। নাম কি ছেলের?
– লাকিত। ভালো নাম আবুল আস। খুবই নম্র এবং ভদ্র ছেলে। খুবই ভাল ছেলে।
-তোমার ভাগ্নে, ভাল ছেলে না হয়ে উপায় আছে।
সাহাবায়ে কেরাম সবাই অশ্রুসজল। তারা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ। নেকলেসটি আবুল আসকে ফেরত দিয়ে দেওয়া হোক। তিনি মুক্তিপন আদায় করেছেন। আপনি আপনার মেয়ের জামাই হবার পরও তাকে ছাড় দেননি। এখন মুসলমানদের পক্ষ থেকে নেকলেসটি আমরা আমাদের বোনকে ফিরিয়ে দিতে চাই।
প্রিয় শিষ্যদের প্রস্তাব নবিকে আপ্লুত করল। নেকলেসটি নিয়ে নিজেই চলে গেলেন আবুল আসের কাছে। ফিরিয়ে দিলেন তাকে। কৃতজ্ঞতায় নুয়ে আসল আবুল আসের মাথা। নবিজি বললেন, ‘যাও, তুমি মুক্ত। যাবার আগে একটা অনুরোধ করতে চাই। মক্কায় গিয়ে আমার মেয়েটিকে আমার কাছে মদিনায় পাঠিয়ে দিও। কতদিন আমি আমার মেয়েকে দেখি না…
… ক্রমশ