রুবাইয়াত ই রায়হান
মানুষ কবরে উপস্থিত হলে একটা সাইকোলজিক্যাল টেষ্টও থাকবে আল্লাহর পক্ষ থেকে। হাদিস দ্বারা এটি বুঝা যায়, কিন্তু এই প্রশ্নের ব্যাপারে কোনো আলোচনাই হয়না।
আবু দাউদের হাদিসে এসেছে, মাইয়্যেত(মৃত ব্যক্তি) যখনই মারা যাক আর তাকে যখনই কবরস্থ করা হোক না কেন, কবরের মধ্যে তাকে বিশেষ একটা হাল দান করবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। কবরের মধ্যে সূর্যটা প্রায় ডুবে যাবার সময় যেমন পরিবেশ থাকে, সেরকম একটা সময় অনুভব করবে সে।
হাদিসের পরিভাষায় আছে, যখন তাকে ফেরেশতা দ্বারা কবরের মধ্যে জাগানো হবে ও উঠে বসানো হবে, সে উঠে দেখবে সূর্যটা যেন ডুবে যাচ্ছে। উঠে বসানোর সাথে সাথে আল্লাহর বান্দা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়বে। তার ভাবখানা এমন হবে যে, ‘হায়হায়, আমি তো ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম! আমার তো খেয়ালই নাই যে আসরের নামায পড়া হয়নি! ওয়াক্ত তো শেষ হয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্নোত্তর পর্বের জন্য কবরে আসা ফেরেশতাদেরকে সে তখন বলবে, ‘সময় নাই অপেক্ষা করো। আমি কয়টা রাকাত নামাজ পড়ে নেই, আমি একটু নামায পড়ে আসি!’
এই হাদীসের রেফারেন্সে কোরআনের আয়াত এসেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুরা বাকারার ২৩৮ নং আয়াতে বলেছেন, “তোমরা নামাজকে সংরক্ষণ করো, আর বিশেষ করে তোমরা আসরের নামাজের ব্যাপারে গাফেল হয়ো না”। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “যার আসরের নামাজ চলে গেল, তার দুনিয়াটা যেন ধ্বংস হয়ে গেল”। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজি’উন।
আল্লাহর নবীর এই হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, মাইয়্যেতকে জাগানোর সময় পরিবেশটা এমনভাবে তৈরি করা থাকবে, যেন সূর্য ডুবে যাচ্ছে, আর সে ঘুম থেকে সদ্য জেগে উঠে আসরের নামাযের জন্য ছটফট করা ব্যক্তি।
আল্লাহর ফেরেশতারা সাথে সাথে বলবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিস্থিতি তৈরি করে তোমাকে যে সাইকোলোজিক্যাল পরীক্ষা করা হয়েছে সেটাতে তুমি পাশ করেছো। বারযাখী জীবনে কোন নামাজের প্রয়োজন নেই। আল্লাহু আকবার!!!
এভাবে এই বিশেষ পরীক্ষায় পাশ করা মানে পরীক্ষার হলটা তাঁর জন্য সহজ হয়ে গেলো। এখন একটু ভেবে বলুন তো, যে ব্যক্তি নামাযই পড়ে না ,সাত দিনে একদিন জুমু’আর দিনে পড়ে; যোহর পড়ে তো আসর পড়ে না, আসর পড়ে তো জোহর পড়ে না, জুমুআ পড়ে তো ওয়াক্ত পড়েনা, কতজন আবার আছে নিজেকে এত স্মার্ট ভাবে, বছরে একবার ঈদের নামাজ কিছুতেই ছাড়েনা(সামাজিকতা রক্ষার নামায, আল্লাহকে খুশি করার জন্য পড়েনা)।
তো এই ব্যক্তিরা যখন সেই বিশেষ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে- তাদের কাছে তো নামাযের কোনো মুল্যই নেই। কবরে জেগে উঠে তো তারা নামায পড়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত হবেনা!
একটা ওয়াক্তের নামাজ ছুটে গেলে মনের মধ্যে কি কষ্ট হয়, সেই ফিলিংসটাই তো সে পয়দা করতে পারেনাই। কেমন করে সে এই সাইকোলজিকাল পরীক্ষায় সফল হতে পারবে!
সুতরাং, আপনি নিয়মিত বিশুদ্ধভাবে নামায পড়লে আপনার জন্য সুসংবাদ। আপনি এই মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষাটা ধরতে পারবেন আর সেই অনুযায়ী নামায পড়ার জন্য উদ্যোগী হয়ে যাবেন আর আল্লাহই আপনাকে সেই পরীক্ষায় পাশ করতে সাহায্য করবেন ইন শা আল্লাহ। দুনিয়াতে থাকাকালীন নামাযের প্রতি আপনার ভালবাসার উপহারস্বরূপ এই পরীক্ষায় পাশ করার নিয়ামত পেয়ে যাবেন ইন শা আল্লাহ।
কিন্তু, বেনামাযী হলে কোনো উপায় নেই। সেদিন আল্লাহর সাহায্য পাবেন না। কারণ দুনিয়াতে আপনি নামাযকে ভালোবাসেননি। ঐখানে গিয়েও নামাযের সময় ‘চলে যাচ্ছে যাচ্ছে’ পরিস্থিতি দেখে আপনার নামায পড়ার তাড়না থাকবেনা। আর আপনি পরীক্ষায় ধরা খেয়ে যাবেন।
সুতরাং, যত দুনিয়াতে বড় জ্ঞানী, নামীদামী ব্যক্তিই হোন না কেন, আপনি যদি নামাজী না হন,নামাজের প্রতি যদি দরদ না থাকে, হতবুদ্ধি হয়ে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়বে, কিন্তু নিজেকে ধিক্কার দেয়া ছাড়া সেদিন আর কিছুই করার থাকবেনা।
তো, যারা এখনো নামায পড়েন না, তারা একটু ভেবে দেখবেন কি? প্লিজ! সেই ভয়াবহ দিনটায় নামাযবিহীন অবস্থায় গেলে কবরের চাপ সহ্য করতে পারবেন তো?