শিরোনাম থেকে বুঝতেই পারছেন আমি দুটি বিপরীত মেরু নিয়ে আলোচনায় এসেছি। প্রথমে সংঙ্গায়ন করি— রুপ বলতে পৃথিবীতে অস্তিত্বসম্পন্ন সমস্ত কিছুর বাহ্যিক অবস্থাকে বোঝায়। বাইরে থেকে জিনিসটি দেখতে কেমন? কালো নাকি সাদা, উঁচু নাকি নিচু, ছোট নাকি বড় এসব কিছুই রূপের অন্তর্গত। অপরদিকে, গুণ বলতে পৃথিবীতে অস্তিত্বসম্পন্ন সমস্ত কিছুর আভ্যন্তরীন অবস্থাকে বোঝায়। যদি তা মানুষের ক্ষেত্রে হয় তাহলে মানুষের ভেতর তথা মনের প্রকৃত অবস্থাই গুণ। অথবা মানুষের আচার আচরণ, কথা বার্তার ধরণ, ব্যবহার এসব কিছু। যেগুলো মনের অনুভূতি বা আভ্যন্তরীণ বিবেক থেকেই বাহ্যিকভাবে প্রকাশ পায়। আর যদি তা কোন বস্তুর ক্ষেত্রে হয় তাহলে তা মানসম্মত কিনা, টেকশই কিনা, শক্তিশালী বা মজবুত কিনা সেগুলোও গুণের অন্তর্ভুক্ত।
সংঙ্গায়ন থেকে আমি লক্ষ্য করি যে, রূপ বা গুণ দু’টিরই দু’টি দিক রয়েছে। যেমন, ভালো দিক ও খারাপ দিক।
উদাহরণস্বরূপ, কেউ কালো হোক বা সাদা হোক উভয়ই তার রূপ। অনুরূপভাবে, কেউ ভালো চরিত্রের বা খারাপ চরিত্রের উভয়ই তার গুণ।ইঃরেজীতে, Adjective বা বিশেষন বলতে যেমন দোষ-গুণ উভয়কেই বুঝানো হয় তেমনি রূপ বা গুণ দ্বারাও ভালো-মন্দ উভয়কেই বুঝানো হয়।
এবার রূপ ও গুণ নিয়ে সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির দিকে একটু লক্ষ্য করি—
বর্তমানে আমাদের সমাজ শোচনীয়ভাবে নিম্নতলে এগুচ্ছে। কোনো কিছু নিয়েই সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি যুক্তিযুক্ত বা ইতিবাচক নয়। সমাজের মানুষরা সব বিষয়েই উল্টোটা নিয়ে বোঝে। ক্ষতিকারক বা ক্ষণস্থায়ী জিনিসের পিছনেই উঠেপড়ে লেগে যায়।যার ফলে পরবর্তীতে কোনো কিছুই ফলপ্রসূ হয় না। রূপ বা গুণ নিয়েও তাদের একই ভাবনা। তারা শুধু মানুষের রূপ বা সৌন্দর্যের পিছনেই ছুটে। মানুষের গুণকে বিবেচনা করে না।
এ বিষয়টি সবচে’ বেশি পরিলক্ষিত হয়, বিয়ে শাদীর ক্ষেত্রে। একবাক্যে বলতে গেলে, শতকরা ৯৮% মানুষ রূপের অন্বেষণ করে। গুণ বলে যে মানুষের একটি সুন্দর দিক রয়েছে, সেটি তারা ঘুণাক্ষরেও খেয়াল করে না। ব্যক্তিগতভাবেই অনেক পুরুষের জবানবন্দি শুনেছি। সবার একটাই স্বপ্ন— জীবনে এমন একজনকে চায়, যাকে দেখলে চক্ষু শীতল হবে, মন ভরে যাবে, শুধু চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করবে, আর সব দুঃখ ভুলে যাবে। এসব কিছুই রূপকে নির্দেশ করে।
সমাজের মানুষের কাছে আমার একটি প্রশ্ন— ধরুন, আপনি একজন সুন্দরী, রূপবতী নারীকে বিবাহ করেছেন। যার গায়ের রং দুধে আলতা, উচ্চতায় একদম পারফেক্ট, চোখদুটো টানা টানা, মুখটা যেন চাঁদের ন্যায় আর চুলগুলোও যেন ঘন কালো মেঘের মতো। কিন্তু কী লাভ তাতে? হয়তো ক্ষণিকের জন্য সে আপনার চোখ জুড়িয়ে দেবে, আর মন ভরিয়ে দেবে। কিন্তু যদি সে গুণবতী না হয়, তাহলে সে আপনার কোন উপকারেই আসবে না।
কেননা, আপনি যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন বা বিপদে পড়েন আর যদি দেখেন সেই রূপবতী নারী আপনার পাশে নেই, আপনার সেবা করছে না, আপনার জন্য প্রার্থনা করছে না অথবা আপনার জন্মদাতা পিতা-মাতার কোনরূপ যত্ন নিচ্ছে না অথবা তাদেরকে বাসাতেই স্থান দিচ্ছে না। তখন কী হবে? তখন কি কোন উপকার হবে সেই চাঁদের মত মুখটা দিয়ে? কী লাভ হবে টানা টানা চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে!!
অপরদিকে যদি গুণবতী নারীকে বিয়ে করেন, সে আপনার বিপদের সাথী হবে, অসুস্থতায় আপনার পাশে থাকবে, আপনার পিতা-মাতাকে আগলে রাখবে। আর যদি সে গুণের সাথে সাথে রূপবতীও হয়, তাহলে তো আপনি সোনায় সোহাগা। তবে যদি সে রূপবতী না হয়, তাহলে বাকি থাকবে আপনার চোখের তৃপ্ততা আর মনের পূর্ণতা লাভ। আর সেটাও নির্ভর করবে আপনার চোখের উপরই। যদি আপনি বাহ্যিক চাকচিক্যকে প্রাধান্য না দিয়ে মনের চোখ দিয়ে দেখেন, তাহলে পৃথিবীর সমস্ত কুৎসিত নারীও আপনার চোখে বিশ্বসুন্দরী হয়ে ধরা দেবে।
তাই আসুন, আমরা সবাই শুধু রূপকেই প্রাধান্য না দিয়ে বিশেষভাবে গুণকে প্রাধান্য দিতে শিখি। যা আমাদেরকে চিরস্থায়ী সুখ ও কল্যাণ উপহার দেবে।
কথায় আছে— “রুপ যায় শ্মশানঘাটে, আর গুণ থাকে সর্বকালে”।
লেখিকা: হাবিবা জাহান
মাস্টার্স, আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ।
কামিল, হাদিস বিভাগ।
ধাপ সাতগাড়া বায়তুল মুকাররম মডেল কামিল মাদরাসা, রংপুর।
বিজয় বাংলা/এনএ/১৪/৫/২২