মুফতি আফফান বিন শরফুদ্দীন
সম্প্রতি ‘সার্বজনীন পেনশন স্কিম’ নামে নতুন একটি সেবা(!) চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আঠারোর বেশি বয়সের প্রবাসী, চাকুরিজীবী, ব্যাবসায়ী ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা এই স্কিমের অধীনে ব্যাংকে প্রতি মাসে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা জমা দিলে ষাট বছর বয়সের পরে আমৃত্যু প্রতিমাসে একটা মোটা অংকের টাকা পাবেন ঘরে বসে। কিন্ত এই স্কিমে অংশগ্রহণ করাটা বাঙালী মুসলিমদের জন্য তিন কারনে অনুমোদনযোগ্য না।
এক – ইসলামের দৃষ্টিতে এই স্কিম অকাট্যভাবে হারাম। নির্ভেজাল সুদ। এ বিষয়ে সমস্ত অর্থনীতিবিদ ও আলেম ওলামা একমত।
দুই – অর্থনৈতিক বিবেচনাতেও এই স্কিম অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিকর। কারন কয়েক দশক পরে যখন এই টাকা তোলার সময় হবে তখন ইনফ্লেশন/মূদ্রাস্ফীতির কারনে এই টাকার মান এসে হয়তো ঠেকবে তলানিতে। আমরা যদি আশির দশকের টাকার মানের সাথে বর্তমান টাকার মান তুলনা করি তাহলে খুব সহজেই বুঝতে পারবো যে, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ত্রিশ চল্লিশ বছরে আমাদের টাকার মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে। বাঙালীর নাকের সামনে ঝুলানো এই মুলার পিছে ছোটার চেয়ে প্রতিমাসে কিছু কিছু টাকা ছোটখাটো কোন ব্যাবসায় ইনভেস্ট করলেও মাত্র কয়েক বছরে প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যাবসায়ী হয়ে ওঠা সম্ভব।
তিন – অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই এই স্কিমকে দেখছেন শুভঙ্করের ফাঁকি হিসেবে। কারন ইতিমধ্যেই এদেশের কিছু বড় ব্যাবসায়ীর লুটপাটের ফলে ব্যাংকগুলোতে তৈরী হয়েছে বিশাল সংকট। টাকা না থাকায় অনেক কিছুর আমদানিও বন্ধ রেখেছে সরকার। এখন ‘ত্রিশ চল্লিশ বছর পরে লাভ পাওয়ার আশায়’ এদেশের জনসাধারণ সবাই যার যার ক্ষুদ্র সামর্থ্য ও সঞ্চয়ের টাকা যদি সার্বজনীন পেনশন স্কিমের নামে ব্যাংকে জমা দেয় তাহলে ব্যাংকগুলোর সংকট কিছুটা কমবে। কিন্ত যারা ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা ইতিমধ্যেই গায়েব করে দিয়েছে তারাই এখনো এদেশের অর্থনীতির প্রধান শক্তি। দেশের উল্লেখযোগ্য সব বড় বড় ব্যাবসাগুলো এসব বিজনেস কোম্পানির দখলে। ফলে তারা যে সার্বজনীন পেনশন স্কিমের নামে আসা গরীব জনতার কষ্টার্জিত টাকাগুলো ব্যাংক থেকে নানান উপায়ে লুট করবেনা তার কি গ্যারান্টি আছে?
যারা ইতিমধ্যেই হাজার কোটি, শত কোটি টাকা আত্নসাত করেছে তাদের তো নীতিবোধ বলে কিছু নেই। তারা যে ব্যাংকে টাকা দেখলে আবারো লুটের জন্য হাত বাড়াবে তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। কারন টাকার লোভ সহজে বদলানোর জিনিস না। দুর্নীতিবাজ বিজনেস ম্যাগনেটরা যতদিন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে না আসবে ততদিন ব্যাংকে টাকা রাখা আর শিয়ালের কাছে মুরগী জমা দেয়া সমান।
আমরা বিশ্বাস করি, বাঙালী মুসলিম জনতা আবেগী কিন্ত তারা বোকা না। তাই তারা বাস্তবতা ভুলে গিয়ে গণহারে এই ‘আকাশকুসুম স্বপ্ন’ দেখানো স্কিমের ফাঁদে পড়ে টাকা পয়সা খোয়াবেনা বলেই আমাদের ধারনা।